আলোচনা যখন শেষ হলো তখন সে আমাকে বলল ভাই চলেন শহীদ হয়ে আসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিরাত মাহফিলে গোলাম কিবরিয়া তার ভাই শহীদ ফরহাদ হোসেনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো লেখার মাধ্যমে।

আমি গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।আমার ভাই মোঃ ফরহাদ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র  ছিল। গত চৌঠা আগস্ট মাগুরা শহরে আন্দোলনের সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় যেই দিন সব থেকে বড় আকার ধারণ করছিল শহরে সেদিন ও আন্দোলনে গেছে কিন্তু বাসায় জানায় নাই। এরপর যখন আন্দোলন আরো গুরুতর হলো বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ হয়ে গেলো তখন বাসায় চলে আসে। 

চৌঠা আগস্ট যেদিন মাগুরা শহরে এ ঘটনা ঘটলো ওইদিন সকালবেলা আমরা পরিবারের সবাই মিলে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। আলোচনা যখন শেষ হলো তখন সে আমাকে বলল ভাই চলেন শহীদ হয়ে আসি। এরপর ও মাগুরায় গেছে যোহরের নামাজ আদায় করছে। আল্লাহ তায়ালা বোধহয় আগেই ওরে ইঙ্গিত দিয়ে দিছিল। ফরজ নামাজ শেষে ও নফল নামাজ সময় নিয়ে আদায় করছে।এরপর দীর্ঘ মোনাজাত করছে।

 এরপর মিছিলে শরিক হয়ে যখন  শহরের পারনান্দুয়ালী ব্রিজ পার হবে তখন গোলাগুলি হচ্ছিল তখন ছাত্রলীগের একটা গুলি ওর মাথায় এসে লাগে তখনই পড়ে যায় রাস্তার উপর এরপর বেশি সময় নেয় নাই  অল্প কয়েকটা কথা বলছে ওর আশেপাশে যারা ছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তাদেরকে যে আমার নাম মোঃ ফরহাদ হোসেন আমার বাসা রায়নগর  আমার ফোন এবং আমার লাশটা আম্মুর কাছে পৌঁছায় দিবেন। এরপর নিজে নিজেই কালেমা পড়ছে আল্লাহ তায়ালার কাছে চলে গেছে।হসপিটালে নিয়ে গেছিলো কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করছে। এরপর আমরা বাসায় নিয়ে গেছি গোরস্থানে দাপন করছি।আমি ওর বড় ভাই সব ক্ষেত্রে আমি ওর অনুসরণীয় হওয়ার কথা ছিল  কিন্তু ও আমার অনুসরণীয় হয়ে গেল। 

আল্লাহর রসুল (স) এর একটা মহৎ গুণ ছিলো যে প্রত্যেক  সাহাবী মনে করতো যে আল্লাহর রসুল (স) সব থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসে। আল্লাহ তায়ালা আমার ভাইয়ের আখলাক এত সুন্দর করছেন যে আমার খালা,আমার চাচাতো বোন,চাচাতো ভাই  ওনাদের প্রত্যেকেরই ছেলে আছে ৮/৯  বছর বয়সের। প্রত্যেকেই মনে করত ফরহাদ তাদের ছেলেকে বেশি ভালোবাসে।আল্লাহ তায়ালা তাকে এরকম সিফাত দিছিলো।আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। এবং এই আন্দোলনে যারা ন্যায়ের পক্ষে  লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা সবাইকে শহীদের মর্যাদা দান করুন এবং  আমরা যারা দিলের মধ্যে শহীদী তামান্না রাখি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।

Post a Comment

Previous Post Next Post