তামিমের বাম হাত অকেজো হওয়ার পথে

কলেজ শিক্ষার্থী তামিম হোসাইন একসময়ে পাড়ার মাঠে ব্যাট-বল হাতে ছুটে বেড়াতেন। তিনি এখন বিছানা আর বাড়ির আঙ্গিনায় ছটফট করে দিন কাটাচ্ছেন। একসময়ে তার দু’চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। এখন সে দু’চোখে অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার কালো ঘোর ভর করছে।

মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ তামিমের বাম হাত গুলি করে। সেই হাত এখন অকেজো হওয়ার পথে।

পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্নে কিছুটা বাঁধ সেজেছে তামিমের। এখনো বাম হাতের রগ আর হাড়ের ভিতরে বয়ে বেড়াচ্ছে গুলি। ফলে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পরলে চির দিনের জন্যে বাম হাত অকেঁজো হয়ে যাবে। যদিও প্রশাসন থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

আহত পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিলো মাদারীপুর পৌর শহরের লেকপাড়। একদিকে শিক্ষার্থী, অন্যদিকে তৎকালীন সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী। তিন ঘন্টাব্যাপী চলে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়লে পুলিশ ব্যাপক গুলি ছুড়তে থাকে। এতে শতাধিক শিক্ষর্থী আহত হয়। এদের মধ্যে মাদারীপুর সরকারী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ডিগ্রী শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসাইনের শরীরে একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে ওই দিনই সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরের দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার তিন দিন পরে ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হয়। সেখানে কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে আসে। তবে বাম হাতের তালুর রগ আর একটি আঙ্গলের গুলি বের করা যায়নি। ফলে বাড়ীতে সঠিক চিকিৎসা না করায় বাম হাতটি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক দৈন্যতার জন্য উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবারটি।

আহত তামিমের মা মোসাম্মৎ নাজমা বেগম বলেন, আমার দেশকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সদর চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে ঢাকাতে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু বাম হাতের রগে গুলি থাকায় এক হাত অকেজো হওয়ার পথে। এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠন থেকে কিছু সহযোগিতা করেছে কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত না। শুনছি, সরকারিভাবে চিকিৎসা করবে কিন্তু সেটার কোন প্রতিফলন দেখছি না। আমাদের আর্থিক তেমন সচ্ছলতা নেই, তাই সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।’

তামিমের বাবা মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্দী গ্রামের মো. আনোয়ার মাতুব্বর। তিনি ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আনোয়ার মাতুব্বরের দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলে তামিম। সামান্য আয়ে চলছিল তাদের সংসার। আনোয়ার মাতুব্বরের পক্ষে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না। বর্তমানে তামিমের চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন অন্তত ১০ লাখের বেশি টাকা। তাই এ স্বপ্নবাজ তরুণের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি আহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর।

আর উদীয়মান তরুন তামিম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা গুলির সামনে নিজেদের বুঁক উচিয়ে দিয়েছি। যখন কোন সমন্বয়ক ছিল না। এখন অনেকেই সমন্বয়ক দাবী করে। অথচ আমাদের চিকিৎসার ব্যয়-ভার বহন করছে না। তাই সুচিকিৎসার জন্যে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে অধরাই থেকে যাবে আমাদের স্বপ্ন।’

জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কার সাহা বলেন, ‘তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার করা হবে। যদি কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায়, সেক্ষেত্রও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর কোন পুলিশ সরাসরি দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তথ্যসূত্র: আমার দেশ

#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post