নবজাতক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী

 

ছেলে সন্তানের বাবা হলেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান। গত ২৭ ডিসেম্বর ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান জন্ম দেন শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগম। নাম রাখা হয় ওমর ফারুক। তবে বাবার রেখে যাওয়া নামে নবজাতককে ডাকা হলেও পৃথিবীতে এসে দেখতে পারেনি জন্মদাতা পিতাকে। ওমর ফারুকের আগমনে আনন্দের জায়গায় অব্যক্ত আর্তনাদ এখনও তার পরিবারে। নবজাতক ওমর ফারুকের ভবিষ্যৎ নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মা ফাতেহা বেগম। এমতাবস্থায় শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ও নবজাতকসহ পুরো পারিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান।

শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তার ছেলে সন্তান হবে। এই আনন্দে শাহজাহান তার ছেলে সন্তানের নাম রাখেন ওমর ফারুক। সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে শহীদ শাহজাহান ১৬ জুলাই সকালে কামরাঙ্গীরচর ভাড়া বাসা থেকে প্রতিদিনের মতো পাপস বিক্রি করতে আসেন ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায়। বিকেল ৩টার দিকে তার মোবাইল থেকে এক অপরিচিত লোক স্ত্রী ফাতেহাকে ফোন করে জানায়, তার স্বামী শাহজাহান আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছেন। এ খবর পেয়ে তিনি বাসা থেকে ঢাকা মেডিকেলে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামী ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চালকালে নাকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার আগেই সে শহীদ হন।

স্ত্রী ফাতেহা বেগম জানান, অভাব অনটনের সংসারে অনেক আশা নিয়েই ঢাকায় পাপস বিক্রি করে সুখের সংসার চালাতাম। ভাগ্য এমন হবে জানতাম না। আমি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় ডাক্তারের কাছে ছেলে সন্তানের কথা শুনে হযরত ওমর (রা:) নামে নাম রেখে যান তিনি। কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তার বাবাকে দেখবেন না এটা তো জানতাম না। আমার স্বামী শহীদ হওয়ার পর পুলিশকে অনেক অনুরোধ করার পর মর্গের দরজা খুলে এক নজর তার লাশ দেখতে দেয়। সে সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে, পরে জানতে পারি পুলিশ আমার স্বামীকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করেছে। কষ্টের বিষয় হল আমার সন্তান বড় হওয়ার পর তার বাবার কবরের চিহ্ন হয়তো থাকবে না।

ভোলার ৪৬ শহীদের মধ্যে শাহজাহান একজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদদের সম্মান মর্যাদা দেয়ার নিয়ম অনুযায়ী তাকেও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়েছে। সবশেষ অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে ভোলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে ২৭ ডিসেম্বর ছেলে সন্তানের জন্মদিন শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগম। খবর শুনে সাথে সাথেই ফুল, ফল আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র ও ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছুটে যান ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। ছেলের লালন-পালন এবং বড় হয়ে পড়ালেখা সহ সকল দায়-দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ সময়ের ভোলা জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম ও কামরুন নাহার এনিও উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক বলেন, প্রথম থেকেই আমরা শহীদ পরিবারের সকল খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। এখনও নিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এই পরিবারকে একটি ঘর করে দেয়ার চেষ্টা করছি।

শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগম বর্তমানে সন্তানসহ তার মা মোসাম্মদ নবীশি বেগমের কাছে থাকেন। সরকারের কাছে তার চাওয়া এই সন্তানের ভবিষ্যৎ অবস্থা বিবেচনা করে সরকার যেন তার সকল খোঁজ-খবর রাখেন।

তথ্যসূত্র: আমার দেশ


#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post