জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পূর্ব দিক থেকে ঢাকার প্রবেশদ্বার সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ি এলাকা ছিলো সবচেয়ে উত্তাল। পুলিশের গুলি-সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ভয় আন্দোলনকারীদের দমাতে পারেনি। বিশেষ করে শনির আখড়াকে এক ধরনের কিলিং জোনে পরিণত করেছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা। রাজপথে অস্ত্রের ঝনঝনানি ও আকাশপথে বৃষ্টির মতো গুলির দৃশ্য দেখে বিবেককে মানাতে পারেননি নাজমুল কাজী।দেশ মাতৃকার সন্তানদের প্রতি সরকারের এমন নির্মমতা তাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই নিজের কাজ ফেলে প্রতিদিন যোগ দিতেন আন্দোলনে।
স্ত্রী মারিয়া জানালেন, ১৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্বামী নাজমুল কাজী জানতে পারেন শনির আখড়ায় আন্দোলনকারীদের জন্য পানি ও শুকনা খাবার প্রয়োজন।
তাই দেরি না করে মোহাম্মদবাগের বাসা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে কিছু পানির বোতল ও শুকনা খাবার নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে বিতরণ করেন নাজমুল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে থাকা অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা তাকে ব্যাপক মারধর ও ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান দুই পথচারী। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আন্দোলনে আহত কাউকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত একটি রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে তিনি (স্ত্রী মারিয়া) খবর পেয়ে বিকাল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে এক সারিতে ৫ জনের লাশ দেখতে পান। এর মধ্যে একজন তার স্বামী নাজমুল কাজী।
তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। বাবা সেলিম কাজী ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। গত ৪-৫ বছর ঢাকার রায়েরবাগের মোহাম্মদবাগ এলাকায় কাপড়ের ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন নাজমুল। স্ত্রী মারিয়া (২৪) ও আড়াই বছর বয়সের একমাত্র সন্তান আরিয়ানা কাজী নুজাইরাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আর বাবা-মা ও ছোট দুই ভাই থাকেন গ্রামের বাড়ি মুরাদনগরের দৌলতপুরে। মেজো ভাই সাজারুল কাজী (২৮) এসএসসি ও ছোট ভাই আমির হামজা কাজী অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেননি। দুই ভাই এখন পর্যন্ত বেকার। তবে মেজো ভাই সাজারুল কাজী সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
#Tales_of_July

Post a Comment