জাবির ইব্রাহিমের বয়স সবে ছয় পেরিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তার খুব বেশি বোঝার কথা না। তবে টেলিভিশন দেখে এবং বড় বোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জুবাইনা কবির নেহার কাছ থেকে জেনে সে আফসোস করত। শিশুসহ অন্যদের মেরে ফেলার বিষয়টি তাকে খুবই পীড়া দিত।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকালে মাথায় একটি হেলমেট পরে বাবার কাছে আসে শিশু জাবির ইব্রাহিম। এরপর বাবাকে বলে, ‘আমি আর্মি অফিসার হব’। বাবা প্রশ্ন করেন, ‘কেন’? জাবির বলে, ‘আমি আর্মি হয়ে পুলিশকে মারব। পুলিশ আমার ভাই-বোনদেরকে গুলি করে মারতেছে, এই জন্য তাদেরকেও আমি মারব’। বাড়ির সকলে জাবির ইব্রাহিমের এই কথায় অবাক হয়ে যায়।
ওই দিন দুপুরের দিকে স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪২), সন্তান জুবাইনা কবির নেহা (২১), জুবায়ের মাহতাব আবদুল্লাহ (১১) ও জাবির ইব্রাহিম (৬) কে সাথে নিয়ে ঢাকার উত্তরা এলাকায় বিজয়োল্লাসে যোগ দিতে যান কবির হোসেন (৫৩)।
ফ্যাসিবাদি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ তখন সড়কে সড়কে আনন্দ মিছিল করছিল। খুব খুশি ছিল শিশু জাবির ইব্রাহিমও।
কখনো মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে, কখনো আঙুল উঁচিয়ে বিজয় উদযাপনে সেও সবার মত ব্যস্ত ছিলো।
পিতা কবির হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি সেতুর উপর ছিলাম আমরা। এ সময়ে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। লোকজনও দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আমিও পরিবারের লোকজন নিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি। জাবিরের ডান হাত ছিল আমার বাঁ হাতে ধরা। হঠাৎ একটি গুলি এসে জাবিরের পায়ে লাগে। একটু দূর গিয়েই জাবির নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকদের অনেক অবহেলা ছিল। পরে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক জাবিরকে মৃত ঘোষণা করেন।’
শহিদ জাবির ইব্রাহিমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের তুলাই শিমুল গ্রামে। তবে তাদের পরিবার ঢাকার উত্তরায় থাকত।
জাবির ইব্রাহিমের পিতা কবির হোসেন উত্তরা এলাকায় ব্যবসা করেন। সেখানেই তাদের বসবাস। জাবির ইব্রাহিম পড়ত উত্তরা কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি বিভাগে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাবির ইব্রাহিম ছিল সবার ছোট।
#Tales_of_July
Post a Comment