গুলিবিদ্ধদের পানি খাওয়াতে গিয়ে নিজেই বুলেটবিদ্ধ হয়ে চোখ হারিয়েছেন ঈশান

 

ঈশান সিকদার। মায়াবী চেহারার শিশুটি টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন বিদ্যা নিকেতনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ইশান মা-বাবার সঙ্গে ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকে। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের উত্তর মানপাশা গ্রামে।

৫ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানার সামনে বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যায় ইশানের। ইশানের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে ইশানের পরিবারে। ইশানের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে এখন নিঃস্ব হতে চলেছে এই দরিদ্র পরিবার।

গত ৩০ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্বজন ও আহতদের নিয়ে স্মরণসভায় কালো সানগ্লাস পরা একটি শিশুকে মলিন মনে বসে থাকতে দেখা যায়। ওখানে উপস্থিত আহতদের মধ্যে এই শিশুটি সর্ব কনিষ্ট।

শিশুটির কাছে গিয়ে এই প্রতিবেদক জানতে চায় তার চোখে কীভাবে গুলি লাগল। শিশু ইশান জানায়, গত ৫ আগস্ট যখন বিজয় মিছিল চলছিল তখন উত্তরা পূর্ব থানার সামনে বিজয় মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে গুলির মহড়া।

এ সময় অনেক লোক গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে তিনজন পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। ইশান ও তার বন্ধুরা এ সময় তাদের জন্য পানি নিয়ে এগিয়ে যায়। ঠিক এ সময় পুলিশের ছররা গুলি ইশানের নাক ভেদ করে বাঁ চোখে বিদ্ধ হয়ে মণিতে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ইশান।

এ প্রসঙ্গে আমার দেশের সঙ্গে কথা হয় ইশানের বাবা স্যানেটারি মিস্ত্রি বাবুল সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে সেখান থেকে তাকে পথচারীরা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই হাসপাতাল থেকে দুই দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাঁ চোখ ফেলে দিয়ে কৃত্রিম প্লাস্টিকের বল লাগানো হয়। এখন ইশানের বাঁ চোখ সম্পূর্ণ অকেজো।

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ইশান আর বাঁ চোখে দেখতে পারবে না। ইশানের বাবা জানান, দীর্ঘমেয়াদি এই ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তার সব পুঁজি শেষ হয়ে সে এখন ঋণগ্রস্ত। কয়েক লাখ টাকা দেনা হয়েছেন তিনি। বাবুল সিকদার আরও বলেন, আমার নিজের পেশা স্যানিটারির কাজেও যেতে পারি না। এখনো ছেলেটা অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে।

‘আমার একমাত্র সন্তানের বাঁ চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। চিকিৎসকরা তার চোখে কৃত্রিম চোখ লগিয়ে দিয়েছেন। ছেলের চিকিৎসার কারণে আমার পেশায় সময় দিতে পারছি না। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় বাসাভাড়াও দিতে পারছি না।’

ছেলের লেখাপড়া এখন আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছি। ইশানের মা পাপিয়া বেগম আমার দেশকে বলেন, কোনো দিনই তার ছেলের চোখ ভালো হবে না। ছেলেটির চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকারের কোনো অর্থসহায়তা পাইনি।

এ বিষয় জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান আমার দেশকে বলেন, যারা চোখ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সব নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।

তথ্যসূত্র: আমার দেশ

#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post