অন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে শুভ'র

 

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘড় ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে মো. মেহেদী হাসান শুভ। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করতে এসে চোখে স্প্লিন্টারের আঘাতে আজ চোখের আলো হারোনোর শঙ্কায় দিন কাটছে মেহেদীর।

যাদের রক্তের ওপর পা দিয়ে যারা গদিতে বসে সেই আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন করা তাদের দায়িত্ব। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা চাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজপথের সম্মুখ যোদ্ধা মেহেদী হাসান শুভ।

মেহেদী হাসান শুভর বাবা মো. লিটন মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা ঋণ করে চিকিৎসার জন্য খরচ করেছি। আমার একমাত্র ছেলে। আমার ছেলের দুই চোখ নিয়ে আমি চিন্তিত। দেশের জন্য আমার ছেলে এত কিছু করল। কিন্তু এখন চিকিৎসার অভাবে আমার ছেলের চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, ২৪ আন্দোলনে আহত ভাইয়েরা আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ উপভোগ করতে পারছি। এসব আহত বীর যোদ্ধার সুচিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। যেন আগামী দিনেও তারা যে কোনো দেশবিরোধী শক্তিকে প্রতিরোধে আমাদের নির্দেশনা দিতে পারে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করব মেহেদীর হাসান শুভর মতো বীর যোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে।

কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান শুভ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি চলাকালে গত ১৮ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মিছিল নিয়ে কোটবাড়ী যাওয়ার পর দুপুর ১২টায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।

বিশ্বরোডের টমছম ব্রিজ রোডের মাথায় অবস্থান করার সময় প্রথম গুলিটি শুভর বুকে লাগে, দ্বিতীয়টি মাথায়। তারপর রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে বড় ভাইরা তুলে নিয়ে আলেখারচর প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার ডাক্তাররা টাওয়ার হসপিটালে পাঠালে সেখান থেকে আবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে পরে কুমিল্লা ইনসাফ হাসপাতালে এক দিন ভর্তি থাকার পর সেখান থেকে ঢাকা ভিশন আই হসপিটালে রেফার করে। সেখানে এক্স-রে করে দেখা যায় তার দুই চোখে দুটি স্প্লিন্টার আছে।

ভিশন হাসপাতালে যাওয়ার পর অপারেশন করেন ডা. মনিরুজ্জামান। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচটি অপারেশন হয়েছে। ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, বাম চোখ কিছুটা ভালো আছে। বাম চোখে সিলিকন অয়েল রিমুভিং অপারেশন করা হলে কিছুটা ইনপ্রুভ হতে পারে। ডান চোখ নিয়ে শঙ্কা আছে। ডান চোখের জন্য সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল আই সেন্টারে দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি। বিদেশে চিকিৎসা না হলে দুনিয়ার আলো না দেখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ডা. মনিরুজ্জামান।

গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে পাঁচজন ডাক্তার দেখার পর পুনরায় ডা. মনিরুজ্জামানের কাছে রেফার করে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পরীক্ষার জন্য চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে আছে সে। চোখে ব্যথা হয়। চশমা দিয়েও দেখতে পারে না।

চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি তিনি। সরকারি সহায়তা চাইলে বলে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখাতে। লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে বলেছিলেন। কিন্তু সবাই ঘুরেফিরে ডা. মনিরুজ্জামানের কথা বলেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাম চোখের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। ডান পাশের চোখ টা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ। চোখের রেটিনা ছিঁড়ে ভেতরে চলে গেছে। চোখের অবস্থার আস্তে আস্তে অবনতি হচ্ছে। এটা আমি বুঝতে পারছে সে।

শুভ বলেন, আমার চাওয়ার কিছুই নেই। শুধু চোখের চিকিৎসা করাতে চাই। আমার বাবা একজন কৃষক। চিকিৎসার জন্য এত টাকা কোথায় থেকে পাব। এক ভাই তিন বোনের সংসার। পরিবারের বড় সন্তান আমি।

মা-বাবাকে বলেছি সৃষ্টিকর্তা চাইলে হয়তো অন্য কোনো দুর্ঘটনার মাধ্যমেও আমার এমন অবস্থা হতে পারত। আন্দোলন করতে গিয়ে এমন হয়েছে এটা আমার কাছে অনেক সম্মানের মনে হচ্ছে। আমি আমার দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি এটাই যথেষ্ট। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেলাম।

তথ্যসূত্র: আমার দেশ

#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post