রুবেল মণ্ডলের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের বড় শিমুলতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের রিকশাচালক বাবলু মিয়ার ছেলে। মা রওশন আরা বেগম গৃহিণী। রুবেল স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার সাভারে থাকতেন। তাঁরা স্বামী–স্ত্রী দুজনই পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশুলিয়া থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান।
তিন ভাইবোনের মধ্যে রুবেল মণ্ডল বড়। ছোট ভাই ওয়াশিম মণ্ডল ঢাকায় রিকশা চালান। একমাত্র বোন রুমানা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। রুবেল অষ্টম শ্রেণি পাস। সংসারের অভাব-অনাটন। বাবার আয়ে সংসার চলে না। রুবেল প্রায় ১২ বছর আগে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সাত বছর আগে সাথি বেগমকে বিয়ে করেন। সাথিও পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
৪ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টায় কারখানা ছুটি হয়। তখন সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। আশুলিয়া থানার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে তাঁর চোখের সামনে এক শিক্ষার্থী মারা যায়। অনেকে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এসব দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি রুবেল। তিনিও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। হঠাৎ তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে; মাটিতে পড়ে যান। এ অবস্থায় ছোটভাই ওয়াশিমকে ফোন করেন। তিনি আশপাশেই ছিলেন। ওয়াশিম তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শরীর থেকে পাঁচটি গুলি বের করা হয়। মাথার তিনটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি।
বাবা বাবলু মিয়া বলেন, ‘১৩ শতক বাড়িভিটে ছাড়া হামার কোন জমিজমা নাই। বয়োস হয়া গ্যাচে। একন এ্যাকসা চলাতে কষ্টো হয়। আশা করি ব্যাটাক চাকরিত পাঠানো। সোংসারোত আয় উন্নাতি করবে, কিনতো গুলি নাগি সগ শ্যাষ হয়া গেল। এ্যাকসা চলেয়া যেকনা কামাই করি, তাক দিয়া বাজার খরোচই হয় না। ব্যাটার চিকিৎসা করামো ক্যামন করি।’
মা রওশন আরা বেগম বলেন, ‘গুলির ব্যতাত ছোলটে আইতোত নিন (ঘুম) পারব্যার পায় না। ওর জন্যে হামারঘরে নিন হামার হচে। ব্যাটার বউ ঢাকাত গ্যাচে। ছোটো ছোল দুইট্যাক নিয়া কসটোত আচি। হামার ব্যাটাক ভালো করি কেটা দিবে।’
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
#Tales_of_July
Post a Comment