মুসাকে নিয়ে ‘আশা না ছাড়ার’ লড়াই করছেন মা–বাবা

‘উই নেভার লুজ হোপ’ (আমরা কখনো আশা ছাড়ি না)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (পিআইসিইউ) প্রবেশদ্বারে এমন একটি বার্তা লেখা। এই আইসিইউতে সাত বছরের শিশু বাসিত খান মুসাকে নিয়ে ‘আশা না ছাড়ার’ লড়াই করছেন মা–বাবা ও চিকিৎসকেরা।

মুস্তাফিজুর রহমান ও নিশামণি দম্পতির একমাত্র সন্তান মুসা। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরার মেরাদিয়া হাট এলাকার বাসার নিচে গুলিবিদ্ধ হয় মুসা ও তার দাদি মায়া ইসলাম (৬০)। তিনি মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাসার নিচে নেমেছিলেন। তখন দুজনেই গুলিবিদ্ধ হয়।

মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। আর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর তাকে ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। এর দুই দিন পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

চিকেন ফ্রাই আর ‘স্পাইডারম্যান’ভক্ত ছেলের অসংখ্য ছবি মুঠোফোনে—স্পাইডারম্যানের পোশাক ও মুখোশ পরে, ব্যাগ নিয়ে দুষ্টুমিমাখা ছবি। বাবার সঙ্গে চিকেন ফ্রাই খেতে থাকা ছবি। এসব ছবি এখন নিশামণির মনঃকষ্ট বাড়াচ্ছে।

ছেলে এখন মাঝেমধ্যে মায়ের দিকে তাকালেও কিছু বলে না। গত ৮১ দিন ধরে হাসপাতালেই দিনরাত কাটছে এই মায়ের। তিনি হাহাকার নিয়ে বলেন, একমুর্হূর্তে তাঁর ছোট্ট পরিবারটিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ছেলের জন্য এখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু এই চিকিৎসা মুসার সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে মুসার চিকিৎসা আর নেই। চিকিৎসকেরা তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বলছেন। কিন্তু তাঁদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।

ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর আকুলতা নিয়ে নিশামণি বলেন, ‘আমার ছেলে কি রাষ্ট্রের জন্য এতই বোঝা! সরকার কি পারে না ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে! ওর চিকিৎসার টাকা দেওয়ার কি কেউ নেই!’

মুসার এখন মা-বাবার সঙ্গে আনন্দে, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে চঞ্চলতায় মেতে থাকার কথা ছিল। অথচ সে রাজনীতির নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে এখন হাসপাতালের শয্যায় বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে। তবু তার ঘুরে দাঁড়ানোর, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন সহায়তার হাত।

তবে মুসার মায়ের আকুলতায় সরকার, সমাজ কতটা সাড়া দেবে, তা পরিবারটির জানা নেই। মুসার মা আবেগপ্রবণ হয়ে ধরা গলায় এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘যদি মুসা মরে যায়, তাহলে আমার জন্যও একটা বুলেট রেখে দিয়েন আপনারা।’

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো 


#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post