মাথায় গুলি লেগে মগজ বের হয়ে যায় নাইমার

 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। গত বছরের ১৯ জুলাই বিকাল ৫টা। পুলিশ ঢাকার উত্তরায় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাওয়া করে। তখন মিছিলকারীরা নাইমা সুলতানাদের বাসার নিচে অবস্থান নেয়।

আন্দোলনকারীদের মিছিলের শব্দ শুনে নাইমা পরিস্থিতি দেখতে বারান্দায় গিয়ে বসে। এ সময় পুলিশের গুলি নাইমার মাথার বাম পাশে লেগে পেছন দিয়ে মগজ ও রক্ত বের হতে থাকে ।

তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাবা ডা. গোলাম মোস্তফা আফসোস করে বলেন, তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। একটি নক্ষত্রের বিদায় হলো। অকালে ঝরে গেল একটি তাজা প্রাণ।

সম্প্রতি মতলব উত্তরের সুজাতপুর বাজারে চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলেন ডা. মোস্তফা। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়ার পর বসতে বললেন। জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত নাইমার কথা জিজ্ঞাসা করার পরই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। বলতে থাকেন মেয়ের স্বপ্নের কথা।

নাইমা বাবাকে বলেছিল, তুমি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়েছো। আমি এলোপ্যাথিক চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেছিলেন নাইমা সুলতানার (১৫) পিতা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের আমুয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি আরো জানান, তার স্ত্রী আইনুন নাহারও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। সন্তানদের বাসায় দেখাশোনা করার কারণে তার স্ত্রী চেম্বারে বসেন না। উত্তরার বাসায়ই তিনি সন্তান লালন-পালন করেন। তাদের ২ মেয়ে ১ ছেলে। বড় মেয়ে তাসকিয়া সুলতানা উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

আর মেজো মেয়ে নাইমা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। একমাত্র ছেলে আব্দুর রহমান (৯) ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। নাইমা বলত বাবা আমি এমবিবিএস ডাক্তার হব।

তিনি জানালেন, তার মেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে কার্টুন একে সমর্থন দিত। সে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করত।

ডা. মোস্তফা বলেন, সে সময় তিনি মতলব উত্তরে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নাইমা নেই এ কথা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। রাতে তারা মতলব উত্তরের সুলতানাবাদ ইউনিয়নের আমুয়াকান্দা গ্রামে লাশ নিয়ে আসেন। পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরো জানান, আন্দোলন চলাকালীন নাইমা তার মাকে বলেছিল, আন্দোলনে আমি যদি মারা যাই, তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এখনো সে কথা মনে করে তার মা কেঁদে বুক ভাসায়।

তার বাবার আফসোস, মেধাবী মেয়েটি যে স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করছিল, সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আর যেন কোনো বাবা-মার বুক এভাবে খালি না হয়। তিনি সরকারের কাছে তার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান। তারা দুই সন্তানকে মানুষ করতে চান। এ ব্যাপারে চান সবার সহযোগিতা ।

জুলাই ফাউন্ডেশন নাইমা সুলতানার পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আর্থিক সহায়তাও করেছেন। উত্তরায় নাইমা সুলতানার স্মরণে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

সন্তানদের পড়াশোনার কথা চিন্তা করে ডা. গোলাম মোস্তফা উত্তরায় ৯ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

সংবাদ: আমার দেশ

Post a Comment

Previous Post Next Post