‘শরীরে ১৭০টি গুলির যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না’

 


আব্দুল গফুরের বয়স ৫৫ বছর। পেশায় তিনি কলা ব্যবসায়ী। ছোট এই ব্যবসার আয় দিয়েই চলত তার ৫ সদস্যের পরিবার। ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও মামলা-হামলার প্রতিবাদ করতে গত ২০ জুলাই যোগ দেন আন্দোলনে।

কাজের সুবাদে নরসিংদীর বাবুরহাট শেখেরচরে থাকতেন। সেখানেই মিছিলে অংশ নেন। পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিক হাছেন মিয়ার লাশ নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ-বিজিবি নির্বিচারে গুলি করে। সে সময় গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল গফুর। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ১৭০টি গুলি রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক সিনিয়র কনসালট্যান্ট মমিনুল হক মমিন বলেন, ছররা গুলি বের করতে গেলে ইনজুরি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই আপাতত ব্যথা ও যন্ত্রণামুক্ত থাকতে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।

আব্দুল গফুর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের কলুমা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা । তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে ব্যবসা বন্ধ। এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অভাবে-অর্ধাহারে চলছে জীবনযাপন। পাশাপাশি প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগছেন দিন-রাত।

আব্দুল গফুর জানান, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বর্তমানে ওষুধ খেতে পারছেন না। পাশাপাশি অসহ্য যন্ত্রণা ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতরা চিকিৎসাসহ আর্থিক সুবিধা পেলেও তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি । চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ করেছেন মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য জমানো টাকা। বিক্রি করেছেন ছেলের মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।

আন্দোলনের বিষয়ে আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমার শ্রমিক ও ছাত্র ভাইদের অন্যায়ভাবে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। তখন কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকতে পারিনি। আমার শরীরেও তো রক্ত-মাংস আছে। স্ত্রী-সন্তান নিষেধ করা সত্ত্বেও হাছেনের লাশ নিয়ে মিছিল করেছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েছি। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি বলেই বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে।’

শরীরে গুলির অসহ্য যন্ত্রণার বর্ণনা দিয়ে আব্দুল গফুর বলেন, ‘শরীরে ১৭০টি গুলির যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন ৪৫০ টাকার ওষুধ লাগে। টাকার অভাবে ওষুধ খেতে না পারায় রাত-দিন যন্ত্রণায় ভুগছি। আবার গ্রামের বাড়িতে ভিটেমাটি না থাকায় বাধ্য হয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।’

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি তো অচল হয়ে গেলাম। মেয়ে দুটি বিবাহযোগ্য হওয়ায় বড় দুশ্চিন্তায় আছি। আয় উপার্জন করতে পারি না। ছোট ছেলে চাকরি করার উপযুক্ত না হলেও বাবার দুরাবস্থা দেখে কারখানায় চাকরি নেয়। বেতন কম হওয়ায় সংসার চলে না। আরও তিন ছেলে রয়েছে, যাদের আলাদা সংসার রয়েছে। অল্প আয়ের কারণে তারা নিজেরাই ভালোভাবে চলতে পারে না।’

শরীরের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন আব্দুল গফুর।

এ বিষয়ে তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উপজেলা প্রশাসন ১ জন শহিদ ও ৯ জন আহতের তালিকা করেছে। আব্দুল গফুর তালিকার একজন। সরকার কোনো সহযোগিতা দিলে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

সংবাদ: আমার দেশ

#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post