অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফিরেছেন লাশ হয়ে

 


ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। অন্য অনেকের সঙ্গে মনির ছুটে গেছেন রাজপথে। ৫ আগস্ট শাহবাগে পুলিশের একটি গুলি নিভিয়ে দেয় তার জীবন প্রদীপ। দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার দুর্বার মনোভাব থেকেই নিজের ঝুট কাপড়ের ব্যবসা রেখে তিনি যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে। ফিরেছেন নিথর লাশ হয়ে। পেয়েছেন শহীদের মর্যাদা, দেশও ফিরে পেয়েছে তার অবাধ স্বাধীনতা।

তবে কান্না আর আহাজারি এখনও থামেনি শহীদ মনিরের পরিবারে। বর্তমানে শহীদ মনিরের স্ত্রী রোজিনা বেগম ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ছোট্ট দুই শিশু জুনা (৫) ও আবিরের (১০) ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।

মো. মনির ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শম্ভুপুর গ্রামের আরফত আলী দফাদার বাড়ির আ. মন্নান ও সাজেদা বেগমের ছেলে। মনির মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। জীবিকার তাগিদে বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবা আ. মন্নান পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন ঝুট কাপড়ের ব্যবসা।

আ. মন্নান জানান, মনির ইসলামপুর, সুরিটোলায় এই ব্যবসা শুরু করে। থাকতেন বংশাল এলাকায়। সেদিন, অর্থাৎ ৫ আগস্ট ব্যবসায়িক কাজে না গিয়ে মেসে থাকা কয়েকজন মিলে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। দুপুরের দিকে শাহবাগে পুলিশের গুলিতে আহত হলে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। রাত ২টায় পাশের বেডে থাকা লোকজনের কাছ থেকে মোবাইলে মনিরের মৃত্যুসংবাদ পান বলে জানান তিনি।

শহীদ মনিরের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, শাহবাগে তার (মনিরের) পেটে গুলি লাগে। আমরা রাত ৩টায় তার মৃত্যুসংবাদ পাই। প্রথমে ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কেউই লাশ আনতে যেতে চাননি। পরে ছাত্রদের সহযোগিতায় ৬ আগস্ট সকালে লাশ গ্রহণ করে বাড়িতে এনে দাফন করার কথা জানান তিনি।

শহীদ মনিরের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকা, বিএনপি থেকে ৫০ হাজার টাকা, শিল্পকলা একাডেমি থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এ টাকা থেকে মনিরের বাবাকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকিটা মনিরের স্ত্রী-সন্তানদের জন্য রাখা হয়। সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করেন, বাকিটা সন্তানদের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এ টাকায় খুব বেশিদিন চলতে পারবেন না বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হতাশা প্রকাশ করে রোজিনা বেগম বলেন, এনজিও ব্র্যাক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ করেছিলেন তারা। ব্র্যাক এখনও ৬০ হাজার টাকা পাবে এবং সেই টাকার জন্য ব্র্যাক থেকে অনেক চাপ আসছে বলে জানান তিনি।

সরকারি কোনো আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে সহযোগিতার দাবি জানান।

তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ দেবনাথ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

তথ্যসূত্র: আমার দেশ

#Tales_of_July

Post a Comment

Previous Post Next Post