বীরশ্রেষ্ঠ
ভাস্কর চৌধুরী
দ্যাখো দ্যাখো , কি দেখছো?
রক্ত?
এ রক্ত বালিকার স্রাবের নয়
এ রক্ত তার বুক থেকে নেমে আসছে
ধীরে ধীরে ধীরে
ওকে তোমরা কেউ আর মেরো না
ও হাসপাতালে লুকিয়ে বেঁচেছে
ওকে প্রহার করো না
ও মৃত্যু নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছে।
কি বলেছিলো সে?
তোমরা ওকে মারলে ক্যানো?
কুত্তার মতো পথে শুইয়ে দিয়ে কি করছিলে ভাবো ?
কুত্তা বলেছিলো, হাতে কামড় দিয়ে বলেছিলো
যা তোর মায়ের কাছে যা
এই কথা বলে সে মৃত্যু নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছে
ওকে তোমরা আর আঘাত করো না।
যে মারে , সে মৃত্যু থেকে পালাতে পারে না।
শহীদ আবু সাঈদের জন্য কবিতা
মেহেদী হাসান (সাদা কাঁক)
নিশ্চুপ রাতের বিষাদে যখন ম্লান হয়ে আসে চাঁদ,
বাতাসে ভেসে আসে এক বিপ্লবীর তাজা রক্তের গন্ধ।
আবু সাঈদ, তোমার বুক পেতে দিয়ে ছিলে তুমি,
প্রাণের বিনিময়ে জাগাতে চেয়েছিলে জাতির সমুদ্র।
যে দেহের রক্ত কালো হয়েছিল পুলিশের গুলিতে,
সে রক্তের ছিটায় লাল হয়ে উঠেছিল রাজপথ।
তোমার চিৎকারে ফাটল ধরেছিল নিস্তব্ধ আকাশ,
তোমার প্রত্যাশায় উদ্বেলিত হয়েছিল নিঃসঙ্গ রাত।
বল বীর, চির উন্নত মম শির—
তোমার রক্তে লেখা হল বিপ্লবের ইতিহাস।
তোমার সাহসী মনোভাবের ছোঁয়ায়,
প্রাণ সঞ্চারিত এই তারুণ্য, শিরা জাগে তাদের বুকে।
শহীদ সাঈদ, তুমি আছো সবার হৃদয়ে,
তোমার নামে উঠবে আমাদের নতুন সকাল।
বুক পেতে দিয়ে ছিলে তুমি আমাদের জন্য,
তোমার রক্তের ঋণ শোধ হবে একদিন,
বিপ্লবের আগুনে, তোমার নামে...
অবাধ্য কবিতা
শামশাম তাজিল
যুদ্ধে জেতে না সকলে, অনেকেই হেরে যায়;
ফিরে আসে অন্য যুবক ও যুবতী
মহাফেজখানায় সংরক্ষিত হবে ভুল ইতিহাস, সে কথা জানতেন ইবনে খালদুন।
কিছু সত্য লিখে রাখে পট ও পুঁথি!
অন্ধকারের নেপথ্য থেকে ফিরে আসে অজানা সময়
পথ ভুল করে মানুষ, তবু পথ হারায় না;
তুমিই বলেছিলে।
মৃত্যুও মাঝে মাঝে খুলে দ্যায় আলোর দুয়ার,
জেনেছি বিরহে প্রেম তুমুল হয়; সত্য হেঁটে চলে মানুষের মিছিলে।
ভয়ে মুখ খুলে না ভীতু, লোভেও বন্ধ হয় জবান;
রক্ত বৃথা যায় না, সে কথা জান তুমিও
দ্রুত কিংবা ধীরে
যুদ্ধক্ষেত্রগুলো এগিয়ে আসছে ক্রমশ
ঘুম ভেঙে গেলে দেখবে বুলেট বিদ্ধ নিজেকে আর সন্তানের বুক গেছে চিরে।
পানি লাগবে কারো, পানি
কমল উদ্দিন
বাংলার রাজপথে সমাসীন নব কারবালায়
এসেছিল এক পানির দূত—
‘পানি লাগবে কারো, পানি!’
তখনই তাকে থামিয়েছে এক নিষ্ঠুর বুলেট,
ঘাতকেরা ক্রূর হাসি হেসেছে,
বিজয়ের উল্লাসে মেতেছে।
তবে তারা জানে না— থামেনি সেই পানির দূত,
চলে গিয়ে রেখে গেছে অসংখ্য উত্তরসূরি;
রক্তাক্ত এক কারবালায় দাঁড়িয়ে
তার হয়ে দিচ্ছে স্লোগান—
‘পানি লাগবে কারো, পানি!’
রক্ত লাল
রজত শুভ্র রায়
ক্রোধোন্মত্ত হায়েনা সব, ছিঁড়ে খায় তাজা রক্ত,
গণহত্যার শাস্তি পাবে সবাই, তারা ও তাদের ভক্ত!
অধিকার চাইতে চিৎকার শুনি, প্রগতিশীল সব ছাত্র,
সন্তানহারাদের আহাজারিতে, সকলে শোকে সন্তপ্ত।
বুলেট বিঁধছে আমার সকল ভাই ও বোনদের গায়ে,
ঘাতকেরা বারংবার রক্তনদীতে, রাজকীয় এক নায়ে।
ছোট্ট শিশুটিও পায়নি রক্ষা, অকালে গিয়েছে ঝরে,
আমাদের অস্ত্র আমাদেরই বুকে, বিবেক গিয়েছে মরে।
আমাদের বুকে বুলেট ছুঁড়ে, ঘুম কি হচ্ছে ঠিক?
আমাদের ন্যায় কাঁদছো না তো, হায় রে আমার বীর!
বীরত্ব, সম্মান হারিয়েছো সব, হিসাব বুঝে পাবে,
নিজেরটা যখন যাবে তোমাদের, ইচ্ছের বিরুদ্ধে হবে!
কত মায়ের কোল খালি করলে গণনা কি করা হয়?
নাকি, মেরে তোমরা বিন্দাস আছো, রূঢ় স্বার্থের জয়!
যে বুলেটে, বিদ্ধ করেছো তুমি, আমাদের তাক করে,
কোনো একদিন রক্ষাকর্তা, দেবে কোল খালি করে।
পার পাবে না তোমরা কেউই, আমরা আছি প্রস্তুত,
মনে রেখো, জেনো আমরা সবাই মুক্তির অগ্রদূত।
নিষ্ঠুরের মতো মানুষ মারো, তোমরা কি আসলে মানুষ?
নাকি, তোমরা মানুষ নও, ছড়াও মিথ্যার ফানুস!
যেই ছেলেটি মানুষের জন্যে, পানি পানি বলে চিল্লায়,
তাঁর কপালে বিঁধল বুলেট, কী এক অবলীলায়!
বুক পেতে, যে-ই ছেলেটি, সবার সামনে দাঁড়ায়,
পুলিশ বুকে বুলেট ছোড়ে, '৫২কে মনে করায়।
প্রেয়সী যাকে হারিয়ে ফেলেছে, বুকে তার চাপা কষ্ট,
সারাটাজীবন বেঁচেও মরে থাকবে, তার জীবনও নষ্ট।
বুলেটবিদ্ধকে বাঁচাতে ছেলেটি হাসপাতালে যে যায়,
এই দোষে বুকে গুলি চালাল, অমানুষ অতিকায়।
বন্ধুর বুকে বন্ধু চালাল, ভয়ানক সব অস্ত্র,
ভেঙে গেল যেন বন্ধুত্বের, সকল নীতি-সকল শাস্ত্র!
ধ্বংসযজ্ঞ-হত্যাযজ্ঞে মেতেছে নরপিশাচ,
ক্রন্দন ধ্বনিতে বাতাস ভারী, কেবলই দীর্ঘশ্বাস।
#Tales_of_July
Post a Comment